Daily Gazipur Online

যুদ্ধাপরাধী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার

মনির হোসেন জীবন: যুদ্ধাপরাধী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী খন্দকার গোলাম রব্বানী (৭১)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
র‌্যাব বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে মৌলভীবাজার জেলার সদর থানা সোনার বাংলা আবাসিক হোটেলে র‌্যাব-২ এবং র‌্যাব-৯ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত খন্দকার গোলাম রব্বানী ময়মনসিংহ জেলার সদর থানার মৃত খন্দকার আব্দুর রশীদ এর পুত্র।
শুক্রবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-২ এর সিনিয়র এএসপি সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ ফজলুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত খন্দকার গোলাম রব্বানী মহান মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন ময়মনসিংহ এলাকার কুখ্যাত রাজাকার, পাকিস্তানিদের দোসর, অপহরণ, পাশবিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, নৃশংস হত্যাকান্ড ও গুমসহ নানা মানবতা বিরোধী অপরাধে সরাসরি সম্পৃক্ত যুদ্ধাপরাধী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) কর্তৃক আমৃত্যু কারাদন্ড সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ৮ বছরের পলাতক আসামী।
এদিকে, র‌্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক মোঃ ফজলুল হক জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে খন্দকার গোলাম রব্বানী (৭১) সহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ, পাশবিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, নৃশংস হত্যাকান্ড ও গুমসহ নানা মানবতা বিরোধী অপরাধে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।
তিনি জানান, এছাড়া একাত্তরের ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের গোলকিবাডি বাইলেনের বিখ্যাত ভাস্কর আব্দুর রশিদকে অপহরণ, নির্যাতনের পর দড়ি দিয়ে জিপের পেছনে টেনে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা ও মরদেহ গুম এবং একাত্তরের ২ আগস্ট ত্রিশাল থানার বৈলর হিন্দুপল্লী ও মুন্সীপাড়ায় অগ্নিসংযোগ, সেন্টুকে গুলি করে হত্যা ও দুইজন হিন্দুকে গুলি করে আহত, শহীদ আ. রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে আটককৃত আসামী খন্দকার গোলাম রব্বানী মানবতাবিরোধী কাজে সরাসরি অভিযুক্ত।
সিনিয়র এএসপি মোঃ ফজলুল হক জানান, খন্দকার গোলাম রব্বানী যুদ্ধকালীন সময়ে জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালের ১৯ মে ময়মনসিংহের আদালতে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে ৫টি পৃথক অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল খন্দকার গোলাম রব্বানীকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রমের পর ইং গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল খন্দকার গোলাম রব্বানী এর বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদন্ড সাজা প্রদান করেন। আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী খন্দকার গোলাম রব্বানী মামলার দায়েরের পর থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
র‌্যাব জানিয়েছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে রায় ঘোষণার পর থেকে র‌্যাব-২, এর বিশেষ গোয়েন্দা দল বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে অভিযান শুরু করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধী গোলাম রাব্বানী এর অবস্থান মৌলভীবাজারে নিশ্চিত হয়ে র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৯ মৌলভীবাজার জেলার সদর থানার সোনার বাংলা আবাসিক হোটেলে গতকাল মধ্যরাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত এবং ৮ বছর পলাতক আসামী খন্দকার গোলাম রব্বানীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী খন্দকার গোলাম রব্বানী উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।