জামালপুরের সেই ডিসি ওএসডি: নতুন ডিসিএনামুল হক

0
311
728×90 Banner

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক: জেলা প্রশাসনের খাস কমারায় একটি ভিডিও কেলেঙ্কারির ঘটনায় জামালপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ কবীরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে সরকার। নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ এনামুল হক। বর্তমান ডিসিকে ওএসডি এবং নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে গতকাল রোববার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফেসবুকে আপলোড করা চার মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের খাস কামরায় যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তা স¤প্রতি নিয়োগ পাওয়া পিয়ন বলে স্থানীয়রা শনাক্ত করেছে। ভিডিওতে ডিসির খাস কামরায় ওই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায় ডিসিকে। মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে তার খাস কামরায় একজন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে তাকে ওএসডি করা হয়েছে বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) আ. গাফ্ফার খান। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ কবীরের ভিডিও কেলেঙ্কারির বিষয়টিকে অনাকাক্সিক্ষত এবং দুঃখজনক মন্তব্য করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে ওএসডি করেছি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জামালপুরের ডিসির বিষয়টি অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি অনৈতিক কর্মকাÐ। একজন ডিসি হিসাবে তার যে দায়দায়িত্ব আছে সেখান থেকে সরে গিয়ে যে অনৈতিক কর্মকান্ডের কথা আমরা দেখেছি, এটি আমাদের কাছে লিখিত এসেছে এবং আমরা খুব তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আমরা তাকে ওএসডি করেছি। এরপরে তার বিরুদ্ধে আমাদের যে আইনগত ব্যবস্থা আছে, চাকরিবিধি অনুযায়ী আমরা সেই পদক্ষেপ নেবো। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করেছি, কাজকর্ম সহজ ও আরো গতিশীল করার জন্য, জনমুখী করার জন্য তাদের অবকাঠামোগত বিভিন্ন রকম সুবিধা এরইমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যুরোক্রেসিকে আন্তর্জাতিকমানের করার জন্য সবদিক থেকে চেষ্টা চালাচ্ছি। যখন আমরা ব্যুরোক্রেসিকে সুন্দরভাবে সাজাচ্ছি এবং নিয়ম-কানুনে বেঁধে এটা আরো উন্নত করছি, সেই সময় এরকম একটি ঘটনা সত্যি খুব অনভিপ্রেত। এটি সত্যি দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি আমাদেরকে অত্যন্ত আহত করেছে। ভবিষতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেক্ষেত্রে শাস্তি কী হতে পারে- প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করার মতো তার পানিশমেন্ট হবে। আমাদের চাকরির বিধানে যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে সেটিই হবে। আমরা আশা করি বিষয়টি খুব দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। একটি কমিটি করে আমরা দায়িত্ব দেবো। কমিটি ভালোভাবে তদন্ত করে বুঝে, কী ঘটেছে সেখানে এবং কতটুকু অনৈতিকতা সেখানে হয়েছে, সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে এক্সাম্পিলারি একটা প্রিমেটিভ মেজার্স নেবো। অল্প দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবো। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি কমিটি গঠন করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেখান থেকেই করলে যথেষ্ট হবে। এগুলো তারাই দেখেন। শুদ্ধাচার সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করা হবে কিনা- প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, অবশ্যই সেটি প্রত্যাহার করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি আমাদেরকে আগামি দিনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। বিষয়গুলো যাতে আরো পরিচ্ছন্ন থাকে, কারণ সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। এ ধরনের ঘটনা সত্যি আমাদের ব্যুরোক্রেসিতে যথেষ্ট পরিমাণে অস্বস্তি এনেছে। আমরা চাইবো আগামি দিনে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। নৈতিকতা পরীক্ষা করে আগামি দিনে চারিত্রিক সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কর্মকর্তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি আসলে অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে আমাদেরকে বাধ্য করছে, কারণ আগামীতে যাতে করে একজন ডিসির মতো এরকম একজন পোস্টে থেকে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে যিনি সমাজের একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে সমাজ পরিবর্তনের একজন মূল ব্যক্তি হিসাবে যিনি দায়িত্ব পালন করেন, তিনি এ ধরনের চারিত্রিক স্খলনজনিত কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকবেন- এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। সেক্ষেত্রে আমরা আগামীতে ডিসি পোস্টিংয়ের বিষয়ে এ বিষয়গুলো আরো সতর্কতা অবলম্বন করবো, তার অতীতের রেকর্ড এবং চারিত্রিক গুণাবলী বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে পোস্টিং করবো। আশা করি আমাদের পদক্ষেপের ফলে আগামীতে এ ধরণের ঘটনাগুলো আর ঘটবে না, সবাই সতর্ক হবে। ওই নারী শাস্তির মধ্যে আসছেন- প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে যারা আছে তারা সরকারে যদি চাকরি করে থাকে, সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকে, তাদের উভয়ের বিচার হবে, উভয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। বিশ্রাম রুম এবং সিসি টিভি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসলে সিসি টিভি থাকার কথা না ওখানে কোনোভাবে। কিন্তু তার কর্মকাÐতো এটা হওয়ার কথা না, এটাই বড় কথা। সে কী ধরনের কর্মকাÐ করবে, তাদের কোড অব ম্যানার্স আছে, এথিকস আছে। সেগুলো অনুযায়ী কিন্তু আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদেরকে চলতে হয়। একজন ডিসি জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সেক্ষেত্রে তার কাছ থেকে উন্নত চরিত্রের একজন মানুষ সবাই প্রত্যাশা করে। তিনি অনুকরণীয় হবেন- সেটিই সবাই প্রত্যাশা করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পরবর্তী যে ইনভেস্টিগেশন করবো তখন কী থাকার কথা কী থাকার কথা না, সবগুলো বিবেচনায় রেখে তদন্ত করবো এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত।

Print Friendly, PDF & Email
728×90 Banner

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here