নাশকতায় লিপ্ত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের —-প্রেসব্রিফিংয়ে র‌্যাব

0
164
728×90 Banner

এস,এম,মনির হোসেন জীবন : রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ‘আল্লাহর দল’ (আল্লাহর সরকার) একটি জঙ্গি সংগঠনের চার সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)। র‌্যাবের হাতে আটককৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম শাহরুল মৃধা (৩৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও মো. শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি টালি খাতা উদ্ধার করে র‌্যাব।
আজ বুধবার ভোরে রাজধানীর দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আজ দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ এলিট ফোর্স র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের। এছাড়া তাদের নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ধৃত ৪জন জঙ্গিরা সংগঠনটির যাবতীয় আর্থিক মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে। মূলত দেশে নাশকতা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের কাজে এগুলো ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ বিষয়ে র‌্যাব অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
গ্রেফতাদের পর জঙ্গিরা র‌্যাবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন এবং ভ্রান্ত ইসলামী সংগীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। পাশাপাশি তারা জঙ্গি কার্যক্রমকে জোরদারের জন্য আর্থিক কাঠামো তৈরি করছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের কি পরিমাণ সদস্য রয়েছে এবং কি পরিমান অর্থ রয়েছে সেটি তদন্ত চলছে। তবে অস্ত্র কেনার যে পরিকল্পনা ছিল তাদেরকে গ্রেফতারের কারণে আপাতত বন্ধ থাকছে। তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।
একটি সুসংগঠিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের ফায়দা লুটতে ‘আল্লাহর দল’ নামে সংগঠন পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সংগঠনটিতে নবী রাসূলদের নিয়মনীতি বহির্ভুত নানা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে বলেও জানায় র‌্যাব।
র‌্যাব অধিনায়ক আরও জানান, বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বিধায় তারা ঈদ, কোরবানি, হজ ইত্যাদি পালন করেন না, জুমার নামাজ আদায় করেন না এবং প্রতি ওয়াক্তে শুধু দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। ১৯৯৫ সালে মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামক জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে এবং ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর গোপন নির্দেশে এটি ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়।
আটক জঙ্গী সদস্য সিরাজুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে সে র‌্যাবকে জানান, ১৯৯৯ সালে মতিন মেহেদীর কাছে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সংগঠনের সদস্য হওয়ার পর ‘গ্রাম নায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী ও নওগাঁয় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে যুগ্ম অধিনায়ক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছেন সিরাজুল। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির মামলা মোকাদ্দমাসহ বিবিধ বিষয়াদির ওপর তদাররি করেন।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদেরকে জানান, জঙ্গী সদস্য মনিরুজ্জামান ১৯৯৭ সালে গাইবান্ধার এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে সংগঠনে আগমন করেন। পরে তিনি গ্রাম নায়ক সহ বিভিন্ন পদে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও খুলনায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এছাড়্া আটক হাফিজুর রহমান সাগর খুলনার খালিশপুর থানায় ‘আঞ্চলিক নায়ক’ এবং পরে ‘জেলা নায়ক’ পদে দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তার সহযোগী জঙ্গী সদস্য শফিউল মোযনাবীন তুরিন ২০১০ সালে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে ‘আল্লাহর দল’ জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
728×90 Banner

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here