
লায়ন এম এ মজিদ: ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালে আমাদের এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে স্কুল টেস্ট পরীক্ষা শুরুর আগের রাতে। আমাদের মহল্লার ছোটবড় সকলে মিলিয়ে ১৪/১৫ জন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খুবই স্পর্শকাতর সশস্ত্র বাহিনীর অফিসের বাহিরের গেটের ডাবগাছের ডাব পাড়ার এক দুর্ধর্ষকর কাহিনি।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য মাঝেমধ্যেই এয়ার রেইড প্রিকিউশন (এ.আর.পি) বা ব্লাক আউটের অনুশীলন খুব কড়াকড়িভাবেই পালিত হতো। কবে ব্লাক আউট পালিত হবে সেটি কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্বেই মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হতো। এছাড়াও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিভিল ডিফেন্সের সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্লাক আউটের গুরুত্ব ও করণীয় বিষয়গুলো বিষদভাবে জানিয়ে ও দেখিয়ে দিতেন। ব্লাক আউট পালিত হতো রাতে এক ঘন্টার জন্য। ব্লাক আউট শুরুর সময় সাইরেন বাজিয়ে দেওয়া হতো। ব্লাক আউট শুরু হলে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। কোনো যানবাহন এমন কি রিক্সা ও সাইকেলও চলতে দেওয়া হতো না। স্ট্রীট লাইট বন্ধ করে দেওয়া হতো। কোনো বাড়ির আলো ঘরের বাহির থেকে দেখা গেলে তাকে তাৎক্ষণিক বেদম প্রহার করাসহ জেল ও জরিমানা করা হতো। সরকারকে সাহায্য করার জন্য প্রতি মহল্লায় এ.আর.পি ভলান্টিয়ার তৈরি করা হতো।
১৯৬৭ সালের ব্লাক আউটের সঠিক তারিখটা আমার মনে পড়েছে না। তবে সেটা খুব সম্ভবত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই ছিল এবং রাতটি ছিল আমাবস্যার। আমাদের মহল্লার বড় ভাইদের ইচ্ছা হলো, আমাদের মহল্লায় এখন যেটি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও হাসপাতাল – সেসময় সেটি ছিল সশস্ত্র বাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় অফিস, যেটি ডিপার্টমেন্ট অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে ডি.এফ.আই বলা হতো। এখন এটিকে বলা হয় ডি.জি.এফ.আই। আমাদের মহল্লার ডি.এফ.আই অফিসটা ছিল অত্যন্ত সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে। এই অফিসের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন ডি.এফ.আই এর একজন সিনিয়র মেজর। তাদের কাজ ছিল পাকিস্তানের পক্ষে ভারতের সামরিক স্হাপনা, শক্তি ও রাস্তাঘাটের বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্পাইং করে ম্যাপ তৈরি ও প্রতিবেদন দাখিল করা। এই বাড়ি বা অফিসটির নাম ছিল “ওমিও কুটির”। এক সময়ের ওমিও নামের এক জমিদারের বাসভবন ছিল এটি। সেই ওমিও জমিদারের নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছিল ওমিও কুটির।
ওমিও কুটিরের প্রবেশ দ্বারে বেশ কয়েকটি উচু ও লম্বা ডাবগাছ ছিল। গাছগুলোতে শত শত ডাব সেসময় ঝুলে ছিল। আমাদের মহল্লার বড় ভাইয়েরা আমাদেরকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন গোপনে পরিকল্পনা করলেন কিভাবে ব্লাক আউটের রাতে ওমিও কুটিরের ডাবগুলো আমরা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই গাছ থেকে পেরে মজা করে খেতে পারি। গাছে কে উঠবে, কে কোথায় থাকবে ও পাহারা দিবে। আমাদের কথা হবে হুইসালের মাধ্যমে। একবার হুইসেল বাজানোর অর্থ কি, পরপর দু’বার বাজানোর অর্থ কি, সাবধান ও ক্লিয়ারের হুইসাল কিভাবে বাজাতে হবে এসবের বেশ কয়েকটি সংকেত আমরা রপ্ত করে ফেল্লাম অল্প সময়ের মধ্যেই। ডাব পড়লে শব্দ হবে। এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দীর্ঘ রশিতে ঝুলিয়ে সেটি পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ আমাদের নিয়ন্ত্রিত স্হানে ডাবের কাইনগুলো যেন আওয়াজ বিহীনভাবে গড়িয়ে এসে পৌঁছে। এসব ব্যাপারে সঠিক ও বাস্তব কর্মকান্ড নির্ধারণের জন্যই আমরা একত্রিত হতাম পরিকল্পনা প্রনয়নের জন্য। আমাদের মহল্লার বড় ভাইরাই কিন্তু আমাদেরকে বুদ্ধি পরামর্শ ও পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ও বুঝিয়ে দিতেন। এদের মধ্যে কেউ দিনাজপুর ডিসি অফিসের সরকারি চাকুরিজীবী আবার কেউ পৌর কনিশনারও ছিলেন।
এই অপারেশনে আমরাই সবার চাইতে ছোট ছিলাম। বাকিরা সবাই আমাদের বড় ছিলেন। আমরা ছোট হলে কি হবে! আমাদের ইউনিটি ও সাহসের জন্যই বড় ভাইরা আমাদেরকে এই কাজে সম্পৃক্ত করেছিলেন। কিন্তু আমি তাদের কারোরই নাম উল্লেখ করবো না এজন্য যে, তাদের প্রায় সকলেই আর ইহলোকে নেই, আবার যারা বেঁচে আছেন তাদের ও প্রয়াতদের নাম লিখলে তাদের সন্তান-সন্তুতি, নাতি-পুতি ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিষয়টি বিব্রতকর মনে হতে পারে, সে শঙ্কায় তাদের নাম উল্লেখ করা হতে বিরত রইলাম।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিন চলে এলো। অর্থাৎ আমাবস্যার রাতেই ব্লাক আউটের রাত্রি ছিল। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে মুকুল কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই খুব সহজেই তরতর করে ডাবগাছে উঠতে পারতো। মুকুল এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তা এবং সেখানকার স্হায়ী বাসিন্দা। আমরা কমপক্ষে সেই অপারেশনে ১৫/১৬ জন ছিলাম। ব্লাক আউটের সময় পড়াশোনা করা যাবে না। কেননা, কোনো কারণে বাহির থেকে ঘরের আলো দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক শাস্তি, জেল ও জরিমানা। সেকারনে বাসায় বসে পড়ার কোনো উপায় নেই। তাই আমি আমার অগ্রজ মতিনকে বল্লাম, বাসায় বসে থেকে কি করবি, চল একটু ঘুরেফিরে ব্লাক আউটের দৃশ্যটা অবলোকন করে আসি। মতিন ভাই সেসময় খুব ভালো কবি, ছড়াকার ও লেখক ছিলেন। শরৎচন্দ্রের “আঁধারের রূপ” লেখাটা মতিন ভাইয়ের মনে বেশ দোলা দিয়ে তাকে সেসময় বেশ কিছুটা ভাবুক করে তুলেছিল। ব্লাক আউট ও আমাবস্যার রাতে শরৎচন্দ্রের সেই আঁধারের রূপ উপলব্ধি করে নিজে কিছু কবিতা, ছড়া ও সাহিত্য তৈরির বাসনায় ভাবুক ও নিরীহ মতিন ভাইকে প্রস্তাব করায় তিনি সম্মত হওয়ায় তাকে আমি সঙ্গে নিয়ে আমাদের অপারেশনের শেষ প্রান্তের নিরাপদ স্হানে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি ফুল অপারেশনে লেগে পরলাম। মুকুলের কোমড়ে কমপক্ষে দেড়শো গজ লম্বা রশি খুব ধারালো দা কোমড়ে বেঁধে দিয়ে তাকে গাছে উঠতে লাগিয়ে দিলাম। আমরা সবাই হুইসাল নিয়ে এ.আর.পি ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালনের নামে ডাব পাড়া অপারেশনে লেগে পরলাম। হুইসেলের সাংকেতিক শব্দ দিয়েই আমরা সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করে মুকুল ডাবের কয়েকটি কাইন কেটে টানটান করে বাধা রশিতে ঝুলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই শা শা করে রশির গোড়ায় নিঃশব্দে এসে পৌঁছালো। কমপক্ষে একশোটার বেশি ডাব নিয়ে আমরা সবাই আনন্দে ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে আমাদের বাড়ির সম্মুখ দিয়ে নিরাপদ স্হান হিসেবে একটি আম বাগানে যাওয়ার সময় বাবা ঘর থেকে বের হয়ে কে কে বলে চিৎকার করে উঠলে আমরা সবাই ডাবগুলো পাশের খালে ফেলে দিয়ে সকলেই ধুরমুর করে যে যেদিকে পারলো সে সেদিকে পালিয়ে গেল। ব্লাক আউটের রাতে এতগুলো মানুষ বাবাকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে, তারা চেনাজানা এবং অসৎ কাজে নিয়োজিত ছিল। বাবা বাসায় এসে আমাকে ডেকে না পেয়ে মতিন ভাইকে ডাকলেন। বাবা আশ্চর্য ও হতবাক হলেন এজন্য যে, মজিদ একটু চঞ্চল এবং আড্ডাবাজ প্রকৃতির, কিন্তু মতিন তো নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। মতিন ও মজিদ দু’জনাই নেই! বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়ে বন্ধু সিরাজের বাসায় গিয়ে সিরাজের বাবাকে বল্লেন, মোফাজ্জল সাহেব, দেখেন তো আপনার ছেলে সিরাজ বাসায় আছে কিনা? তিনি বল্লেন আছে। বাবা বল্লেন, সিরাজকে আপনি নিজ চেখে দেখে এসে আমাকে বলেন। তিনি বাসায় গিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাবাকে বল্লেন, সিরাজকে তো দেখলাম না। তারপর আমার বাবা এবং সিরাজের বাবা দু’জনে একত্রে দুলু ও দীলিপের বাসায় গিয়ে তাদের বাবা হাফেজ সাহেবকে ডেকে বল্লেন, দেখেন তো আপনার ছেলে দুলু ও দীলিপ বাসায় আছে কিনা? হাফেজ সাহেব বল্লেন, হ্যাঁ ওরা দুজনেই ঘরে আছে। বাবা বল্লেন, আপনি দেখে এসে বলেন, ওরা বাসায় আছে কিনা। দুলুর বাবা এবারে খুঁজে এসে বল্লেন, দুলু ও দীলিপকে তো বাসার কোথায়ও দেখলাম না! বাবার দলে এবার দুলু-দীলিপের বাবাও একত্রিত হয়ে মুকুল, মিন্টু, সিদ্দিক, নিজামসহ যারই বাসায় যাচ্ছেন, তাদের সন্তানদের না পেয়ে সকলেই হতাশ, আশ্চর্য ও চিন্তিত হয়ে মহল্লার সকল গার্জিয়ানদের ছোটখাটো একটা আলোর মিছিল চলছে এক বাসা থেকে আর এক বাসায় সন্তানদের খোঁজে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে অভিভাবকদের শোকের মাতমের মতো অবস্থা হয়ে পড়লো। এখানে আলোর মিছিল বল্লাম এজন্য যে, ১৯৬৭ সালে আমাদের মহল্লায় কোনো বৈদ্যুতিক লাইন না থাকায় সকল অভিভাবকগণ লন্ঠন (হারিকেন) হাতে নিয়েই বেড় হয়েছিলেন। আমি ইচ্ছা করেই অবশিষ্ট বন্ধু ও বড় ভাইদের নাম বল্লাম না। তারা সবাই নিজ নিজ বাসায় ফিরে এসেছিল ঠিকই। যার য়ার বাবা যে ধরনের মেজাজি ছিলেন তাদের সন্তানেরা সেরকম শাস্তি ভোগ করে সেই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু আমরা অর্থাৎ মতিন ভাই ও আমি রাতে বাসায় ফিরতে সাহস পাইনি। কেননা, বাবার শাস্তিটা ছিল খুবই নিষ্ঠুর ও নির্মম।
এখন আমরা দুই ভাই সীমাহীন দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে পড়লাম। আমাদের শ্রেণিবন্ধু মতলুবের বাড়ি পাহাড়পুর মহল্লার দক্ষিণের শেষ মাথায়। মতলুবকে সব কথা খুলে বল্লাম। রাতে থাকতে দিতে হবে এবং আগামীকাল সকালে এসএসসি এর স্কুল টেস্ট পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য বইও যোগাড় করে দিতে হবে। মতলুব দু-একটা বই যোগাড় করে দিল সত্য, কিন্তু রাতে থকবো কোথায়? মতলুবদের বাসায় আমাদের রাখা সম্ভব নয়। কেননা, সেখানে থাকলে নিমিষেই সংবাদটা বাবার কাছে পৌঁছে যাবে এই ভয়ে। শেষমেশ মতলুবের পাশের বাড়ির এক বন্ধুর বাহিরের পরিত্যক্ত কাচারি ঘরে থাকার ব্যবস্হা করা হলো। ঘরে একটা চকি ও চেয়ার টেবিল আছে। চকিতে কোনো তোষক, চাদর এবং মশারী নেই। চকিতে আছে শুধু একটা মাদুর। সব চাইতে মহা বিপদের কারণটা হলো, কাচারি ঘরে বৈদ্যুতিক লাইন আছে কিন্তু বাল্ব নেই। এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যাবে? পকেটে কোনো টাকা পয়সাও নেই যা দিয়ে একটা বাল্ব কিনবো। শেষমেশ বুদ্ধি বের করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার স্টিল লাইটপোস্টে বেয়ে উঠে একটা চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব খুলে এনে সেটি কাচারি ঘরে লাগিয়ে পড়ার ব্যবস্হা করলাম সত্য, কিন্তু পেটের তীব্র ক্ষুধার জ্বালা, সেই সাথে ডিসেম্বর মাসে লেপতোষক ও গরম কাপড়চোপড় বিহীন তীব্র শীতের কাপুনি তার উপর হাজারো মশার হুল খেতে খেতে সারাটা রাতের প্রতিটি সেকেন্ড কিভাবে কাটিয়েছি, সেসব কষ্ট ও যন্ত্রনার কাহিনি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখানেই শেষ নয়। যেখানে রাত কাটিয়েছি সেখানে একটি শর্ত দেওয়া ছিল, শর্তটি হলো, তার বাবা ঘুম থেকে উঠার আগেই খুব ভোরে আমাদেরকে ঘর খালি করে দিতে হবে। শর্ত পালনের জন্য খুব সকালেই সেখান থেকে বের হয়ে আমাদের বাড়ির কাছে এসে দূর থেকে লক্ষ্য করছি, বাবা কখন বের হবে আর আমরা বাড়িত ঢুকবো। বাবাও আমাদের দুশ্চিন্তায় বাড়ির ভিতরে ও রাস্তায় পায়চারি মারছেন আমাদের প্রতীক্ষায়। সকাল ৯ টায় বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে প্রবেশ করেই আমরা দুই ভাই মার দুই দিক থেকে দুই পা জড়িয়ে ধরে কেঁদেকেটে মাফ চাইলাম আর খুব তাড়াতাড়ি খেতে দেওয়ার জন্য বল্লাম। মা বললো, তোরা গোসল করে আয়, আমি এক্ষুনি তোদেরকে খাবার দিচ্ছি। আমরা দুই ভাই একত্রে গোসল সেরেই হাপুসহুপুস করে খাবার মুখে ঢুকাচ্ছি আর গিলছি। মা আমাদের খাওয়ার স্টাইল দেখে মার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, আমরা খুবই ক্ষুধার্থ। আর সেটি বুঝেই মা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের থালে বেশি বেশি করে ভাত ও তরকারি তুলে দিচ্ছে আর কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আহারে! আমার সোনারা গতকাল থেকে না খেয়ে কতই না কষ্ট আছে! বাবারা, তোরা আর একটু খেয়ে নে। এভাবে মা জোর করেই প্রয়োজনের চাইতেও অনেক বেশি খাবার কেঁদে কেঁদে জোর করেই আমাদেরকে খাইয়ে দিয়েছিল।
খাওয়া-দাওয়া সেরেই স্কুলের ড্রেস পড়েই বেশ জোরে জোরে হেটে ও দৌঁড়িয়ে স্কুলে যখন পৌঁছালাম তখন পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ মিনিট বিলম্বের জন্য স্যারের কাছ থেকে অনেক গালমন্দ, তিরস্কার ও শাস্তিও ভোগ করতে হয়েছিল।
এখানে একটু বলে রাখা ভালো যে, এই অপারেশন ব্লাক আউটের কর্ণধার কিন্তু আমরা বা আমাদের সমসাময়িক বন্ধুরা ছিলাম না, এর মূল পরিকল্পনাকরীরা ছিলেন আমাদের মহল্লার বড় ভাইরা। তারা এখন আর কেউই বেঁচে নেই। তাদের নাম উল্লেখ করলামনা এজন্য যে, তাদের সন্তান-সন্তুতি, নাতি-পুতি ও আত্মীয়-স্বজনরা এটাকে কিভাবে গ্রহন করবে সেই দ্বিধায়। সেই অপারেশন ব্লাক আউটে আমরা ছোটরা ছিলাম শতভাগ একতাবধ্য ও বড় ভাইদের বিশ্বস্ত অনুসারী।
কিন্তু আমি কেনো লাজ-লজ্জা, দ্বিধা-সংকোচ – সব কিছুকে উপেক্ষা করে শৈশবকালে আমি কেমন ছিলাম এবং কি করেছি – সেসব কাহিনি একের পর এক জানান দিয়েই চলেছি। আমারও ছেলে ও বৌমা রয়েছে। আরো রয়েছে অনেক ভাই-বোন, ডজনে ডজনে ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগিনা-ভাগিনী, নাতি-পুতি, শত শত রক্তের আত্মীয়স্বজন। আরো রয়েছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী, বন্ধুবান্ধব, গুনগ্রাহী ও পাড়াপ্রতিবেশি। সারা দেশব্যাপী রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের হাজার অনুসারী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্হানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মামলার হাজারো মোয়াক্কেল। সর্বোপরি হাজার হাজার ফেসবুক বন্ধু তো রয়েছেই। আমি বেশির ভাগ মানুষের কাছে শুধু একজন ভালো, আদর্শ ও খাদহীন সোনাই নই – অনেকের কাছেই আমি একজন মডেল ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তারা যখন আমার ছোট বেলার এসব দুষ্টামির কাহিনিগুলো পড়বে তখন তারা ভাববে – আমাদের মডেল মানুষটি ছোট বেলায় কতই না দুষ্ট ও চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিলেন! আর আমি আমার জীবনের কোনকিছুরই রাখিঢাকি না করে ছোট বেলায় আমার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অকাতরে লিখেই যাচ্ছি এবং আগামীতেও যা কিছুই মনে পড়বে সেসব আমি অকপটে লিখতেই থাকবো – ইনশাআল্লাহ।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, লায়ন এম এ মজিদ
এ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং
চেয়ারম্যান, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটি ও ওয়ার্ল্ড পীস এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।
