নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ১২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান খান অলি (সিদ্দিক মাস্টার) এর ৪৯তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে তার কর্মস্থলে আততায়ীর হাতে নিহত হন তিনি। মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার চারিগ্রামে ১৯৪৫ সালের ৩১ মে তার জন্ম। চারিগ্রাম শাহাদত আলী খান হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান দখল করেছেন। এই স্কুল থেকেই ১৯৬১ সালে তিনি কৃৃতিত্বের সঙ্গেই এসএসসি পাশ করেন। ঢাকার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জগন্নাথ কলেজে পাসকোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৬৫ সালে বিএ পাস করেন। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী সিদ্দিক ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ৭ জুন অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে কারাবরণ করেন। পরবর্তী সময় বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তিনিই জাসদের প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ভারতে গিয়ে তিনি মুজিববাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন। দেশের অভ্যন্তরে সাফল্যের সঙ্গে বেশ কয়েকটি হানাদার বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন। নবাবগঞ্জ দোহার এবং কেরানীগঞ্জ এই ৩ থানার কমান্ডার ছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনে সিদ্দিকুর রহমান খান ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। সামাজিক কর্মী হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। নৌকার মাঝিদের দু:খ কষ্ট দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তেন। তাদের জীবনমানোন্নয়নে তিনি নবাবগঞ্জ এলাকায় গঠন করেছিলেন বৈঠাসমিতি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। সমাজকর্মী হিসেবেও প্রভূত খ্যাতি লাভ করেছিলেন। একজন শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন অসাধারণ জনপ্রিয়তা। মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক শুধু মানুষ গড়ার কারিগরই ছিলেন না। তিনি সুলেখক, সুবক্তা এবং নাট্যশিল্পীও ছিলেন। তিনি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক ইত্যাদি লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার এক অসামান্য নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। হাতে লিখে দেয়াল পত্রিকা বের করতেন। স্থানীয়ভাবে মঞ্চস্থ নাটকে বিশেষ বিশেষ চরিত্রে নিজেই অভিনয় করতেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান খানের আত্মার মাগফেরাত কামনার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।