যুবসমাজ যেন চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়ায়

0
147
728×90 Banner

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে। তবে শিল্পায়ন করার সময় প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা। এ জন্য শিল্পোন্নয়ন এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির সভায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়নও প্রয়োজন। কারণ শিল্পায়ন বা শিল্পের বিকাশ ছাড়া কোনো দেশ অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। শিল্পায়ন না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মানুষের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি বাড়ানোর জন্যও শিল্পায়ন জরুরি। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার শিল্পায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমাদের দেশ অত্যন্ত ছোট হলেও জনসংখ্যা অনেক বেশি। এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। আবার প্রকৃতির সঙ্গে আমরা যেন চলতে পারি, কারণ বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করাও অপরিহার্য। সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, শিল্পায়নের জন্য বড় সমস্যা ভূমি। পাশাপাশি ফসলি জমি ও বনভূমিও রক্ষা করতে হবে। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন অনেক বিনিয়োগ- এটা সব সময় এ দেশ থেকে ও দেশে ঘুরতে থাকে। আমরা যত বেশি আনতে পারি আমাদের জন্য ভালো। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আসবে, আবার দেশেও আমাদের যাদের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা আছে, তারাও যেন বিনিয়োগ করতে পারে। আমাদের যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, তাদেরকেও আমরা যেন উৎসাহিত করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের যুব সমাজকে যেন আকৃষ্ট করতে পারি, তাদের উৎসাহিত করতে পারি। শুধু চাকরির পেছনে ছোটা নয়, নিজেদের কিছু করে দেখানো, কাজ করা। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করতে হবে। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে অনেক অগ্রগতি বাংলাদেশ অর্জন করেছে। আশা করি, সামনে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব আমরা। দেশের অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী হয়, মজবুত হয় এবং আত্মনির্ভরশীল হয়, আমরা সে আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় করোনাভাইরাস মহামারি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছিল। আমরা মুজিববর্ষ উদ্‌যাপন করছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের লক্ষ্যই ছিল ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমরা ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল আমরা সামনে আরও এগিয়ে যাব। করোনাভাইরাস শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে। সারাবিশ্বেই মানুষ আজকে নানাভাবে কষ্ট পাচ্ছে এবং তার প্রভাব আমাদের দেশেও এসে পড়েছে।’
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা এ সভায় স্মরণ করার পাশাপাশি স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এমন কোনো দিক নেই, যেটা তিনি এই অতি অল্প সময়ের মধ্যে না করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা দেখেছি হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়, ঠিক পাকিস্তানি কায়দায়। আইয়ুব খান যেভাবে একদিকে সেনাপ্রধান, অপরদিকে রাষ্ট্রপ্রধান, ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশেও শুরু হয়ে গেল গণতন্ত্র হত্যা করা এবং সেনাশাসন। ফলে বাংলাদেশে সেই কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি।
বাঙালি দীর্ঘদিন অবহেলিত এবং পরনির্ভরশীল ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যের কাছে হাত পেতে চলতে হতো। এমনকি বাজেট প্রণয়ন করাসহ কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের কোনো কাজ নিজেদের করার মতো সক্ষমতা ছিল না। এমন একটা অবস্থার মধ্যে বাঙালিকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, আমরা আত্মনির্ভরশীল হব।

Print Friendly, PDF & Email
728×90 Banner

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here