গাজীপুরে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার

0
306
728×90 Banner

সানা উল্লা স্বপন: র‌্যাব-১ কর্তৃক গাজীপুর জেলার মির্জাপুর এলাকা হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ০১ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার।
র‌্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুর এর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন, (জি), বিএন বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের প্রদত্ত তথ্য উপাত্ত ও বিভিন্ন অভিযানে প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণ এবং সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে র‌্যাব ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়ঃ গত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখ আনুমানিক ২৩.৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুর এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে যে, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এর কতিপয় সক্রিয় সদস্য বাংলাদেশের অখন্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য এবং জনসাধারনের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ও নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালানা করে এবিটি‘র সক্রিয় সদস্য ১। মোঃ নুরউদ্দিন শেখ(২২), পিতা-মোঃ বদিউজ্জামান শেখ, মাতা-মোসাঃ শান্তি বেগম, সাং-গোটিয়া, থানা-সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা-সিরাজগঞ্জ’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ধৃত আসামীর নিকট হতে ০২ টি উগ্রবাদি বই, ফেইসবুক উগ্রবাদী পোস্ট-২৩ টি ও ০২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ নুরউদ্দিন শেখ’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে সিরাজগঞ্জ জেলার দত্তবাড়ী কওমি মাদ্রাসা-২০০৭-২০০৮, ভাটপিয়ারি কওমি মাদ্রাসা-২০০৯-২০১৬, সাতবাড়িয়া কওমি মাদ্রাসা-২০১৭-২০১৮ এবং বর্তমানে সিরাজগঞ্জ বনবাড়ীয়া কওমি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত আছে। সে ভাটপিয়ারি কওমি মাদ্রাসা অধ্যয়নকালে ২০১৬ সালে মোতালেব হোসেন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৭ সাল হইতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে। সে নিজেকে এই দলের প্রধান হিসাবে দাবি করেন। বর্তমানে সে সিরাজগঞ্জ জেলার ইসলামীক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রধান হিসাবে কাজ করছে। এছাড়াও ২০১৭ সালের পর থেকে সে বিভিন্ন সময় অনলাইনে (ফেসবুক) এর মাধ্যমে ০৬-০৭ টি ফেসবুক গ্রæপ তৈরী করে প্রচার প্রচারণা চালাত ও জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করত। এভাবে সে ৫০-৬০ জনকে এবিটি এর সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। সে ফেইসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখত এবং অন্যদের সাথে এ সম্পর্কে আলোচনা করত।
তিনি বিভিন্ন বইপত্র পড়ে সকল বিষয়ে পড়াশোনা এবং ভিডিও দেখে নিজেরমত করে দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে একই পতাকাতলে নিয়ে আসা এবং পর্যায়ক্রমে একটি শক্তিশালী ইসলামী মোজাহিদি দল গঠন করা। তিনি তার মসজিদে জুম্মার খুৎবায় তার মতাদর্শ নিয়ে বয়ান করতেন এবং লোকদেরকে অনুপ্রাণিত করতেন। সরাসরি যাদের দাওয়াত দিতেন তাকে তার দলে বেড়াতে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দল গঠন করে দিয়েছেন, যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নামাজের খুৎবায় এবং মসজিদে আগত মুসলিমদেরকে সুযোগবুঝে তার দাওয়াতি কার্যক্রম প্রচার করতেন। সে বাংলাদেশে একটি মাত্র জামাত প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। তিনি একজন সুযোগ্য নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। তিনি তার এলাকাতে উক্ত জামাতের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ২০১৭ থেকে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি সমগ্র বিশ্বে যে সকল স্থানে মুজাহিদরা যুদ্ধ করছে তাদের প্রতি তার একনিষ্ঠ সমর্থ্যন জ্ঞাপন করেন। সে উল্লেখ করেন তার কাছে যদি প্রচুর অর্থ, অস্ত্র এবং মুজাহিদ থাকত তিনি তাদের জিহাদ করার জন্য সেই সকল স্থানে প্রেরণ করতেন। সে নিজেকে একজন সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আর সেই কারনেই বিভিন্ন দলকে সে তার জামাতভূক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এইভাবে জামাত প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হতে গেলে তিনি বাধার সম্মূখীন হবেন সে সেটা জানেন। তখনই তিনি বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তার মুজাহিদদের যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করবেন। যদি জয়ী হয় তবে তার জামাত প্রতিষ্ঠা হবে আর যদি পরাজিত হয় তবে সকলেই শহীদ হবে। এটাকেই তিনি শহীদের কাফেলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করার পর তিনি বহিবিশ্বের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করবেন। যাতে তার জামাত সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ নুরউদ্দিন শেখ’কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে নিজেকে একজন গবেষক হিসেবে দাবী করেন। যদি সরাসরি দাওয়াত কার্যক্রম করা সম্ভব না হত, সেই ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বেশ কিছু গোপন এ্যাপস ব্যবহার করতেন। তিনি এবং তার নের্তৃত্বধীন সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থান হতে তথ্য-উপাত্ত ও অর্থ সংগ্রহপূর্বক সংগঠনের প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণের জন্য এবং নাশকতা ও আতংক সৃষ্টির করার উদ্দেশ্যে উক্ত স্থানে সভা করছিল বলে জানায়। বাংলাদেশকে একটি অনিরাপদ এবং জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার জন্য তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করার প্রস্তুতি চালাচ্ছিল। এছাড়াও ধৃত আসামী নিষিদ্ধ সংগঠনের উপযোগী বই প্রচার বিলি করা, গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করাসহ দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার চক্রান্তে/ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
728×90 Banner

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here